Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষিা ও সংস্কৃতি

 যেগুলোতে আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে অনেক বৈপরিত্য লক্ষ্য  করা যায়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের নিজস্ব ভাষা রীতি এ অঞ্চলের মানুষকে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে।

এ জেলার ভাষা রীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় মানুষেরা অতীতকালের শব্দ বর্তমান কালের বাক্যে ব্যবহার করে থাকে। যেমন-খাইতামনা, যাইতামনা, ধরতামনা, করতামনা ইত্যাদি। এসকল শব্দ শুদ্ধ ভাষায় সাধারনতঃ অতীতকালে ঘটিত অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-(সাধু ভাষায়) ‘আমি তাহার বাড়ীতে খাইতামনা’ (চলিত ভাষায়) ‘আমি তার বাড়ীতে খেতামনা’। কিন্তু কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে এই সকল শব্দ বর্তমানকালে ঘটমান অর্থে কথ্য ভাষায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন-আমি খাইতামনা (আমি খাবোনা), আমি যাইতামনা (আমি যাবোনা), আমি আইতাম ?(আমি আসবো ?), আমি হের কাছ তে টেহা লইছলাম( আমি তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম) ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

 

সংস্কৃতিঃ

 

প্রধানপ্রধানৎসব--
নবান্ন:

সুদূর অতীত হতে নতুন ধান উঠা উপলক্ষ্যে নবান্ন উৎসব প্রতি ঘরে ঘরেপালিত হয়ে আসছে। অগ্রহায়ন মাসে নতুন ফসল ঘরে উঠানোর পর ঐতিহ্যবাহী খাদ্যপরিবেশনের নামই হলো নবান্ন। নবান্নে পিঠা পার্বণের সাথে সাথে পুরনো কিচ্ছা, কাহিনী, গীত, জারি এই সবকে উপজীব্য করে চলে রাত্রীকালীন গানের আসর।
পিঠাৎসব:

অগ্রহায়নপৌষের শীতে নবান্নের পিঠা-মিষ্টি উৎসবের সময় ময়মনসিংহের প্রত্যন্তগ্রামাঞ্চলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।নানা ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছেতেলের পিঠা, মেরা পিঠা, পাটি সাপটা, মসলা পিঠা, পুলি পিঠা, গুলগুল্যা পিঠা, দই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ কলা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, নকসী পিঠাইত্যাদি।
নববর্ষমেলা:
নোয়াবাদইউনিয়নে এখনও শহরের মতো বর্ষবরণের প্রচলন শুরু না হলেও অতিপ্রাচীনকালহতেএখানে বিরল অথচ লোকজ ঐতিহ্যের দাবী নিয়ে দীপশিখা জ্বালিয়ে বাংলা বর্ষবিদায়ের এক নীরব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো। মেলা উপলক্ষে মহিলারা বাপেরবাড়ীতে নাইয়র আসত এবং মেলায় এসে ছোট বাচ্চারা খেলনা, বাঁশি, কিনতো। মেলায়বিভিন্ন রকম সার্কাস, দোলনা খেলা চলতো।


যাত্রাগান:
সাধারনতশীতকালে প্রাচীন লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে যাত্রার আয়োজন করা হয়। এই সবযাত্রা এবং যাত্রাগান কখনো কখনো রাতব্যাপী হয়ে থাকে। যেসব কাহিনী/বিষয়েরউপর ভিত্তি করে যাত্রা হয় তমধ্যে মহুয়া, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং স্থানীয়ভাবে রচিত বিভিন্ন কাহিনী/উপাখ্যান অন্যতম।

 

বিয়ে/জম্মদিন/বিবাহবার্ষিকীরআনুষ্ঠানিকতাসংক্রান্ত-
বাংলাদেশেরঅন্যান্য গ্রামের মতোই সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই নোয়াবাদ ইউনিয়নেবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে জম্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী পালনের প্রচলন আগেতেমন না থাকলেও ইদানিং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মাঝে তা ব্যাপকভাবে দেখাযাচ্ছে। বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী যায় কনের বাড়ীতে। কনের বাড়ীতেবরযাত্রীদের গায়ে রং ছিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহুদিনের, এই নিয়ে ঝামেলাও কম হয়না। বরপক্ষের আনা জিনিস পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি, সমালোচনা, রসাত্মক আলোচনা চলেকনে পক্ষের লোকজনের মধ্যে। খাওয়া-দাওয়া ও বিয়ে শেষে কনেকে বরের বাড়ীতেনিয়ে আসা হয়, সেখানে মহিলারা অপেক্ষা করেন ধান, দূর্বা, চিনি ইত্যাদি নিয়েকনেকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য। পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দুই-তিনদিন পর বর ও কনে মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যায়, যাকে ‘ফিরানী’ বলা হয়। কয়েক দিনসেখানে থেকে পুণরায় বর নিজের বাড়ীতে ফিরে আসেন।

 

সামাজিকরীতিনীতি/সংস্কার/কুসংস্কার/প্রচলিতধ্যানধারণা-
অতিথিপরায়ণতাএ এলাকার একটি উল্লেখযোগ্য রীতি। ধনী গরীব নির্বিশেষে আপ্যায়ন বামেহমানদারীর রীতিটি সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয়উৎসবসমূহে আত্মীয়দের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া, নতুন কাপড় পরিধান করা, ভাল খাবারতৈরী করা ও অপরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো, ঘনিষ্ঠদের নতুন কাপড় উপহার দেয়াইত্যাদি রীতি অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও প্রচলিত। মুসলিম মহিলাদের মধ্যেপর্দা পালনের রেওয়াজ বিদ্যমান, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অধিকহারে। আদিবাসীব্যতীত সব পরিবারই পুরুষ শাসিত। প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিশেষ করে গ্রামেপুরুষেরা আয় রোজগার ব্যস্ত থাকেন আর মহিলারা ঘরের কাজকর্ম সামলান।


বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, যৌতুক, নারীনির্যাতনসংক্রান্ত-

শহরাঞ্চলেএবং শিক্ষিতদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রচলন নেই বললেই চলে। তবে দরিদ্র এবংগ্রামীণ পরিবারে এখন ও বাল্য বিবাহ ঘটতে দেখা যায়। সামাজিক ভাবে বহুবিবাহপ্রশংসনীয় নয়। যৌতুক সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি- একথা বলা যায় তবে তার পরিমাণহ্রাস পেয়েছে। কালের আবর্তে যৌতুকের পণ্যে পরিবর্তন এসেছে।সাইকেল, টিভি, রেডিও এর পরিবর্তে এখন জমি, চাকুরীর জন্য ঘুষের টাকা, বরের বিদেশ যেতেপ্রয়োজনীয় টাকা দাবী করা হয় যা যৌতুকেরই বিবর্তন।