Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
চাতল বন
বিস্তারিত

বাংলার জমিদার

মুগলদের বাংলা জয়ের পর জমিদার একটি বিশেষ পদবি হয় এবং জমিদার বলতে বোঝায় বিভিন্ন ধরনের জমি ও অধিকারের মালিক। স্বায়ত্তশাসিত কিংবা আধা স্বাধীন সর্দার বা গোষ্ঠীপ্রধান থেকে শুরু করে স্বত্বাধিকারী কৃষক যে কেউ জমিদার হয়ে উঠতে পারত। স্বাধীন বা আধা-স্বাধীন সর্দার বা প্রধানরা বশ্যতাক্রমে বা মিত্রতাক্রমে পেশকাশি (নজরানা প্রদানকারী) অধস্তন মিত্রে পরিণত হয়। কিন্তু তাদের প্রশাসনিক স্বশাসনের অধিকার কার্যত অক্ষুন্ন থাকে। আর বাকি সকলেই প্রায় মালজামিন (ভূমি রাজস্ব প্রদানকারী) ছিলেন। তারা মুগলদের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করতেন। মুগলরা স্বশাসিত অথবা সীমান্ত অঞ্চলের সর্দার বা প্রধানদের ছাড়া জমিদার শ্রেণীর বাকি সকল ব্যক্তির বংশানুক্রমিক পদমর্যাদা খর্ব করে। তাদের ওয়ারিশগণ জমিদারিতে বহাল থাকবে কিনা তা কিছুটা হলেও ছিল দেশের সার্বভৌম শাসকের ইচ্ছাধীন। বিদ্রোহ করলে কিংবা নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদেরকে অপসারণ করা যেত। শাসককে পরিতুষ্ট করার বিনিময়ে এই জমিদাররা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা যেমন, খিলাত (মর্যাদাসূচক পরিচ্ছদ) ও খেতাব লাভের অধিকারী ছিলেন। তাদের মর্যাদা, সম্পদ ও অন্যান্য বিষয়ের দ্বারা নির্ধারিত হতো ঐসব অধিকার।

প্রাক্‌-আধুনিক ভারতে বেসামরিক প্রশাসন প্রধানত রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ের ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো। সে কারণে জমি প্রদানের সঙ্গে বেশকিছু প্রশাসনিক দায়িত্বও অর্পণ করা হতো। এই দায়-দায়িত্বের আওতায় জমিদারগণকে রাজস্ব নির্ধারণের বিশদ বিবরণ প্রণয়ন, চাষিদের কাছ থেকে খাজনা আদায় এবং তা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অর্পণ করতে হতো। এছাড়াও স্থানীয় এলাকায় শান্তি রক্ষার কাজে রাজকীয় কর্মকর্তাদেরকে সাহায্য-সহায়তা এবং প্রয়োজনে সেনা সরবরাহ করতে তারা বাধ্য ছিলেন। উচ্চতর শ্রেণীর ভূম্যধিকারীদের শক্তি ও কর্তৃত্বের আংশিক উৎস ছিল জমিতে উৎপন্ন ফসল ও অন্যান্য সামগ্রীতে তাদের ভাগ এবং অংশত স্থানীয় জনপদে তাদের সনাতন আভিজাত্যপূর্ণ মর্যাদাগত অবস্থান। সম্রাটের সনদে এই শ্রেণীর লোকদেরকে যে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনের দায়িত্ব দেওয়া হতো সেগুলি পালনে তাদের এই অবস্থানগত মর্যাদা ও পরিস্থিতি বেশ অনুকূল ছিল।